ঢাকা || ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ব্যবসা বাণিজ্যে স্থবিরতার নেতিবাচক প্রভাব বীমাখাতে

৯ মাসে পলিসি কমেছে সাড়ে ৩ লাখ

ব্যবসা বাণিজ্যে স্থবিরতার নেতিবাচক প্রভাব বীমাখাতে

বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রকাশিত: ১০:৫৭, ৪ জানুয়ারি ২০২৫

উচ্চ মুল্যস্ফীতি এবং সামগ্রিক ব্যবসা বাণিজ্যে স্থবিরতার কারণে ২০২৩ সালে বেসরকারিখাতের বীমা ব্যবসার (লাইফ এবং নন লাইফ) প্রবৃদ্ধি হয়েছে ধীর গতিতে। 
দেশে বীমা কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য মতে, জীবন বীমা খাত ২০২৩ সালে ৮ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১১ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকায় দাড়িয়েছে।

যা ২০২২ সালের তুলনায় বৃদ্ধির হার ২ শতাংশ পয়েন্টেরও কম। গত সপ্তাহে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য মতে, নন-লাইফ বীমাখাত ২০২৩ সালে ১ দশমিব ৭২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪২ হাজার ৩৫১ কোটি টাকায় পৌছেছে। এই প্রবৃদ্ধি ২০২২ সালে ছিল ৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ।  বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সাধারণ সভায় এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি নাসির উদ্দিন পাভেল। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, দেশের বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভ ২ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের নিচে নেমে এসেছে। ডলারের বিপরীতে টাকার অস্বাভাবিক অমূল্যানয়ন হয়েছে। যার ফলে বাজারে ডলার সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে এবং আমদানি নির্ভর ব্যবসার পুনবীমা খাতের উপর প্রভাব পড়েছে। 
প্রতিবেদনে বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ডলারের অতিমুল্যায়ণ প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে ২০২২ সালের মার্চ থেকে নিয়ন্ত্রিত বিনিময় হারের কারণে মার্কিন মুদ্রা ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশী মুদ্রা টাকার অবমুল্যায়ণ হয়েছে ২৮ শতাংশ। 
নাম প্রকাশে অনীচ্ছুক কয়েকটি বীমা কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেছেন, খুচরা বাজারে প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি বীমা ব্যবসার প্রবৃদ্ধিকে প্রভাবিত করার একটি প্রধান কারণ৷ উচ্চ মুল্যস্ফীতি রয়েছে এবং অনেক গ্রাহক আমানতের টাকা তুলে নিচ্ছেন। 
এমন পরিস্থিতিতে জীবন বীমা খাতের ব্যবসা কীভাবে বাড়বে, এমন প্রশ্ন করেছেন তারা। এছাড়াও সাধারণ মানুষের মধ্যে আর্থিকখাতের উপর আস্থার অভাবের কারণে বীমী ব্যবসার প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্থ করতে পারে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। 
একটি নন-লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেছেন, নন-লাইফ ইন্সুরেন্স ব্যবসা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। আমদানি ও রপ্তানি বাড়লে আমাদের ব্যবসা বাড়বে। 
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মোটর বীমা বাতিল করার সিদ্ধান্তের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আমাদের ব্যবসার ওপর। আমি মনে করি বাধ্যতামূলক মোটর বীমা বাতিল হওয়ার কারণে বীমা ব্যবসা স্থবিরের আরেকটি মুল কারণ। 
২০২৩ সালে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একটি কোম্পানিসহ মোট ৪৬টি নন-লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি ৫৯ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকার প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেছে। এছাড়াও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন আরেকটি কোম্পানিসহ মোট ৩৬টি জীবন বীমা কোম্পানি রেকর্ড ১ লাখ ২২ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকার প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেছে। 

এদিকে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) দেশের  বীমা কোম্পানিগুলোর  তিন লাখ ৪৭ হাজার পলিসি বন্ধ হয়ে গেছে। 
২০২৩ সালে মোট ৩৬টি জীবন বীমা কোম্পানির প্রায় ১৫ লাখ ৪২ হাজার গ্রাহকের পলিসি বন্ধ হয়েছে। চলতি বছরে সেই অবস্থার খুব বেশি উন্নতি হয়নি। 
খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, গ্রাহকদের আর্থিক অবস্থার অবনতি, রাজনৈতিক পালাবদল ও দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বারবার বন্যার কারণে মানুষের জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে তারা পলিসি চালিয়ে যেতে পারেননি।
বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থার পরিচালক ও মুখপাত্র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বন্ধ হয়ে যাওয়া পলিসির সংখ্যা কমাতে তারা বিভিন্নভাবে বিমা কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করছেন। এ ছাড়া উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অনেক মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়েছে। 
তারা সংসারের খরচ মেটাতে সঞ্চয় ভাঙতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে অনেকে সময়মতো প্রিমিয়াম জমা দিতে পারছেন না, এতে পলিসি ত্রুটি হচ্ছে। এছাড়া যেসব কোম্পানির পলিসি ত্রুটির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, সেসব প্রতিষ্ঠানকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। 
নিয়ন্ত্রক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত ১৪ বছরে বাংলাদেশে ২৬ লাখের বেশি বিমা পলিসি বন্ধ হয়ে গেছে। ২০০৯ সালে মোট পলিসির সংখ্যা ছিল প্রায় এক কোটি ১২ লাখ, ২০২৩ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৮৫ লাখ ৮৮ হাজার।