২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবাসী আয় দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরের চেয়ে যা ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি
গত দুই অর্থবছরে প্রবাসী আয় ২১ বিলিয়ন ডলারের আশেপাশে ছিল। তবে সদ্য শেষ হওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। যা বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য কিছুটা স্বস্তির খবর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবাসী আয় দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরের চেয়ে যা ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি।
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, 'আমদানি বিল পরিশোধের জন্য ব্যাংকগুলো বৈদেশিক মুদ্রার অপেক্ষায় ছিল, তাই আমরা রেমিট্যান্স আনতে সব ধরনের চেষ্টা চালিয়েছি। এতে শেষ পর্যন্ত প্রবাসী আয় বেড়েছে।'
'নমনীয় বিনিময় হার ব্যবস্থা চালুর কারণে প্রবাসীরা বৈধ উপায়ে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। কারণ এখন বৈধ উপায় ও অবৈধ উপায়ের মধ্যে ডলারের দামের ব্যবধান কমে গেছে। তাই ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ দুই মাসে প্রবাসীরা বেশি পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠিয়েছেন,' বলেন তিনি।
গত ৮ মে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্রলিং পেগ বিনিময় হার পদ্ধতি চালু করে। গতকাল আন্তঃব্যাংকে প্রতি ডলারের বিনিময় হার ছিল ১১৮ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে প্রবাসী আয় এসেছে ২ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি। এছাড়া মে মাসে এসেছিল ২ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার এবং এপ্রিলে ২ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার।
তিনি আরও বলেন, ডলারের দাম আগের বছরগুলোর তুলনায় ভালো হওয়ায় ২০২৪ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে বেশি অর্থ পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
তার ভাষ্য, কিছু ব্যাংক তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে প্রণোদনা দিচ্ছে, আবার সরকারের প্রণোদনা যোগ হচ্ছে। এতে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও বাড়ছে।
তার মতে, প্রবাসী আয় বৃদ্ধির আরেকটি কারণ হলো উচ্চ জনশক্তি রপ্তানি।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মে পর্যন্ত প্রায় ১১ লাখ ৪২ হাজার মানুষ কাজের দেশ ছেড়েছেন। ২০২২-২৩ অর্থবছর দেশ ছাড়েন ১১ লাখ ৩৭ হাজার মানুষ। এছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ৯ লাখ ৮৮ হাজার মানুষ বিদেশ গেছেন।
প্রবাসী আয়ের এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তবে করোনা মহামারির সময় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকায় হুন্ডিতে অর্থ পাঠাতে পারতেন না প্রবাসীরা। তখন সবাই বৈধ চ্যানেল অর্থ পাঠাতেন। ফলে, ২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ রেকর্ড ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে।
অবশ্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা শিথিল হওয়ার পর ২০২২ অর্থবছর ও ২০২৩ অর্থবছরে প্রবাসী আয় কমে প্রায় ২১ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।
একইসঙ্গে বৈধ ও অবৈধ চ্যানেলে বিনিময় হারের ব্যবধান থাকায় ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় আসার পরিমাণ কমে যায়।
পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বলেন, নমনীয় বিনিময় হার চালুসহ নীতিগত উদ্যোগের কারণে ২০২৪ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, ২০২৪ অর্থবছরের শেষ মাসগুলোতে হুন্ডির ব্যবহার কমে গেছে, যা প্রবাসী আয়ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
প্রবাসী আয় বাড়ায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার বাজার এখন অনেকটা স্থিতিশীল বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তবে অনেকের অভিযোগ, কোনো কোনো ব্যাংক প্রবাসী আয় সংগ্রহে সরকারি হারের চেয়ে ডলারের দাম বেশি দিচ্ছে, কিন্তু ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রক সংস্থা এর কোনো সুরাহা করছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুন মাসের প্রথম ২১ দিনে সবচেয়ে বেশি ৪৪১ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ। অগ্রণী ব্যাংক পেয়েছে ১৭১ মিলিয়ন ডলার এবং জনতা ব্যাংক পেয়েছে ১২৭ মিলিয়ন ডলার।
প্রবাসী আয়ের এই ক্রমবর্ধমান প্রবণতা আগামী মাসগুলোতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে স্বস্তি বয়ে আনবে। এখানে উল্লেখ্য, আড়াই বছর ধরে বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের সঙ্গে লড়াই করছে বাংলাদেশ।
২০২১ সালের আগস্ট থেকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এ পর্যন্ত ২৪ বিলিয়ন ডলার কমেছে।
আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী, চলতি বছরের ২৬ জুন বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলার।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশকে যে ঋণ দিয়েছে, তাও চলমান সংকট মোকাবিলায় অবদান রেখেছে।