ঢাকা || ২১ নভেম্বর ২০২৪

তিন চ্যালেঞ্জে আগামী বাজেট:সিপিডি

তিন চ্যালেঞ্জে আগামী বাজেট:সিপিডি

ব্যাংক ইনফো

প্রকাশিত: ০৯:৪৬, ৬ মে ২০২৪

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানীয় ফেলো ও এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফরম বাংলাদেশের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, দেশি-বিদেশি ঋণ পরিশোধের ঝুঁকি বৃদ্ধি ও প্রবৃদ্ধির ধারায় ধীরগতির মতো তিনটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি আগামী অর্থবছরের বাজেট। এসব সংকট মোকাবিলায় সম্প্রসারিত সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে নজর দেওয়া দরকার।

রাজধানীর গুলশানে হোটেল লেকশোরে ‘নতুন সরকার, জাতীয় বাজেট ও জনমানুষের প্রত্যাশা’ শীর্ষক সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এ কথা বলেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতায় চলমান ‘জনসম্পৃক্ত সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা’ কার্যক্রমের আওতায় সেন্টার ফর পিলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) উদ্যোগে এবং এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফরম, বাংলাদেশ সংলাপটি বাস্তবায়ন করছে।

অনুষ্ঠানে বিরোধীদলীয় উপনেতা ও সাবেক মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, জাতীয় সংসদের লাইব্রেরি কমিটির সদস্য এ কে আজাদ এমপি, নাগরিক প্ল্যাটফরমের কোর সদস্য ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। সভাপতির বক্তব্য দেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।


 

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, অর্থনীতিতে সমস্যার ত্রিযোগ ঘটেছে। প্রথমত উচ্চ মূল্যস্ফীতি গত বছর থেকেই ছিল। সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার পরও এখন অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে চলেছে। শহরে গ্রামে খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতি মানুষের জীবনমানকে আঘাত করছে। দ্বিতীয়ত দেশি-বিদেশি ঋণ পরিশোধের ঝুঁকি বাড়ছে। দায়দেনা পরিস্থিতি বড় ধরনের সমস্যার ইঙ্গিত নিয়ে আসছে। প্রবৃদ্ধির হারে কিছু শ্লথকরণ হয়েছে। ফলে কর আহরণ ও খরচ করার সক্ষমতা সংকুচিত হচ্ছে। এই তিনটি সমস্যা আগামী দিনের বাজেটকে নতুন একটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করেছে। তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির পতন ঘটলেও বাংলাদেশে সেই সুফলটা পাওয়া যাচ্ছে না। খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতির প্রভাবে নিম্ন আয়ের মানুষের     আর্থিক সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। সরকারের ঋণের পরিমাণ জিডিপির ৩৭ শতাংশ। পাশাপাশি ৫ শতাংশ ব্যক্তি খাতের ঋণ রয়েছে। ফলে বিনিময় হারের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। ৫ বিলিয়ন ডলারের দায় পরিশোধ করতে না পারায় বিদেশের কাছে খেলাপি না হওয়ার গর্বের জায়গায় চিড় ধরেছে। জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৪ শতাংশের কাছাকাছি চলে এসেছে। প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে বাকি সময়ে সরকারকে গড়ে ১০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, মানুষ সম্প্রসারিত সামাজিক সুরক্ষা, মানসম্পন্ন শিক্ষা ও সফল কর্মসংস্থান চায়। পিছিয়ে পড়ার মানুষের জন্য সরকারি সেবা আরও সম্প্রসারণ করতে হবে। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির সব সুবিধা যাতে একই ব্যক্তির কাছে না যায়, সেটা নজরদারি করতে হবে। সরকার কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে বাজেট দিতে যাচ্ছে। তাই স্বচ্ছতা, দক্ষতা ও দায়বদ্ধতার সঙ্গে বাজেট বাস্তবায়ন করতে হবে।

রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য মিড ডে মিল চালুর পাশাপাশি শ্রমিকদের জন্য দুপুরে খাবারের বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়টি ভাবতে হবে নতুন করে। আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, দুর্নীতি বন্ধ করে সুশাসন নিশ্চিত করতে না পারলে বাজেটের সুফল মিলবে না। সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে মূল্যস্ফীতি কমবে না। কোথাও জিনিসপত্রের সংকট হওয়ার খবর পাওয়া যায় না। খবর পাওয়া যায় দাম বাড়ার। তাই সিন্ডিকেটটে দমন করতে হবে। আর্থিক খাতে সুশাসনের অভাব রয়েছে। ব্যাংক খাতে সমস্যা নতুন না। এম এ মান্নান এমপি বলেন, বাজেটের হেডগুলো রিভিউ করার দরকার আছে। গ্রামের মানুষকে ভাতা দেওয়া হলেও শহরের মানুষ পায় না। শহরের মানুষকে নিয়েও ভাবতে হবে। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শ্রমিকদের দুপুরের খাবারের রেশনিং ও শিক্ষার্থীদের মিড ডে মিল চালু করা দরকার। এগুলো করতে পারলে শ্রমিকদের থেকে উৎপাদন বাড়বে আর শিক্ষার্থীদের মিল হবে বিনিয়োগ।