আওয়ামী সরকারের পতনের পর রজনৈতিক অস্থিরাতা কিছুটা কমে আসায় মানুষের হাতের টাকা ব্যাংকে ফিরতে শুরু করেছে। গত সেপ্টেম্বরে মানুষের হাতের প্রায় ৯,০০০ কোটি টাকা ফিরেছে ব্যাংকখাতে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে এমনটাই উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে টাকার পরিমাণ ছিল ২.৯২ লাখ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে তা কমে ২.৮৩ লাখ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, সরকারের পতন ও ব্যাংকখাতে নানান অনিয়মের চিত্র উঠে আসায় মানুষ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়েছিল। এখন সরকার কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থানে ফেরায় গ্রাহকরা তাদের হাতে রাখা টাকা আবারও ব্যাংকে রাখতে শুরু করেছেন।
তারা বলেন, ব্যাংকখাত সংস্কারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানান পদক্ষেপের কারণে সেপ্টেম্বরে গ্রাহকদের ব্যাংক থেকে আমানত তুলে নেওয়া প্রবণতাও কমেছে।
এদিকে, সেপ্টেম্বরে ব্যাংকগুলোতের ডিপোজিট গ্রোথ (আমানত প্রবৃদ্ধি) গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭.২৬ শতাংশ বা ৯,৭৪৮ কোটি টাকা বেড়ে ১৭.৪১ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
যদিও অগস্টে মোট আমানত ১৭.৩১ লাখ কোটি টাকায় নেমে আসে– যা ছিল আগের মাসের তুলনায় ০.১৬ শতাংশ নেতিবাচক (ঋণত্বক) প্রবৃদ্ধি।
তবে আগের বছরের তুলনায়, আগস্টে আমানত প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ৭.০২ শতাংশে, যা ১৮ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে রেকর্ড ৬.৮৬ শতাংশ সর্বনিম্নে পৌঁছেছিল এই প্রবৃদ্ধি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ব্যাংক খাতে সাধারণত প্রতি মাসে আগের মাসের তুলনায় আমানত বাড়ে। তবে, জুলাই ও অগাস্ট মাসে আমানত বাড়ার বদলে উল্টো কমে গেছে।
চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংকখাতে আমানত বা ডিপোজিট ছিল ১৭.৪২ লাখ কোটি টাকা। অর্থাৎ, দুই মাসের ব্যবধানে ডিপোজিট কমেছে প্রায় ১১,০০০ কোটি টাকা।
অবশ্য, ব্যাংক খাত সংস্কারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানান পদক্ষেপের কারণে সেপ্টেম্বরে গ্রাহকদের ব্যাংক থেকে ডিপোজিট তুলে নেওয়া প্রবণতা কমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।
বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যেও ভালো ব্যাংকগুলোতে ডিপোজিট অনেক বেড়েছে। পাশাপাশি দুর্বল ব্যাংকগুলোতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তারল্য সহায়তার কারণে গ্রাহকদের আস্থা কিছুটা ফিরেছে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, "মানুষের হাতের টাকা ব্যাংকে ফিরেছে এটা ভালো দিক। বোঝা যাচ্ছে, মানুষের নতুন করে ব্যাংকের প্রতি আস্থা তৈরি হয়েছে।"
এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, "কিছু গ্রাহকের আমানতের টাকা উত্তোলনের প্রয়োজন হচ্ছে না; তারপরও অনেক গ্রাহকরা টাকা তুলতে যাচ্ছেন। গ্রাহকের আমানতের টাকা নিয়ে আতঙ্কের কিছুই নেই, সবাই তার আমানতের টাকা ফেরত পাবেন।"
তিনি বলেন, "একযোগে অধিক গ্রাহক টাকা তুলতে গেলে পৃথিবীর কোনো ব্যাংকই টিকবে না। আমি ব্যাংকগুলোর গ্রাহকদের উদ্দেশ্য বলবো, অহেতুক আতঙ্কের কিছু নেই। সাংবাদিকরাও গ্রাহকদের আতঙ্ক কাটাতে এসব বিষয়গুলো তুলে ধরতে পারেন।"
"গ্রাহকের মধ্যে ইতোমধ্যে আস্তা তৈরি হয়েছে। আমরা প্রতিটি ব্যাংককে ভালো অবস্থানে ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছি," যোগ করেন তিনি।