ব্যাংকের পরিচালকের পদ হারাচ্ছেন অর্ধশতাধিক পালাতক সাবেক এমপি ও আওয়া লীগ নেতা। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো ব্যাংক পরিচালক পর পর তিন পর্ষদ সভায় অনুপস্থিত থাকলে তিনি আর পরিচালক হিসেবে থাকতে পারবেন না।
গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন। এর পর থেকেই ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন এমন অর্ধশতাধিক আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ও সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীরা দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন।
ছাত্র হত্যা মামলায় আসামি হওয়ায় গ্রেফতার এড়াতে কেউবা দেশেই আত্মগোপনে আছেন। কিন্তু জুলাই থেকে তারা ব্যাংকের পর্ষদ সভায় উপস্থিত থাকছেন না। এর ফলে আগামী মাস থেকেই ব্যাংক কোম্পানি আইন ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী এসব পালাতক পরিচালক আর স্বপদে থাকতে পারবেন না। তাদের পদ আপনা আপনিই শূন্য হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে অনেক সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা নামে-বেনামে ব্যাংকের মালিক হয়েছিলেন। অনেকেই পুরনো ব্যাংকগুলোর পরিচালকদের রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে বিতারিত করে নিজেরাই নানা কৌশলে শেয়ার কিনে ব্যাংকের পরিচালক হয়েছিলেন। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, পরিচালক হয়েই নামে-বেনামে ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ওই অর্থ আবার পাচার করেছেন।
এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে বের হওয়ার পর তা আর আলোর মুখ দেখেনি সরকারের প্রভাবশালীদের কারণে। গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন। এর পরই ওইসব ব্যাংক পরিচালকও আত্মগোপনে চলে গেছেন। কেউবা দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন। কেউবা দেশের মধ্যেই আত্মগোপনে আছেন। তারা আর ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে উপস্থিত হচ্ছেন না।
এ দিকে, ব্যাংক থেকে জনগণের অর্থ হাতিয়ে নেয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ইতোমধ্যে ১১টি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়ে পুনর্গঠন করা হয়েছে। কিন্তু অনেক ব্যাংকেরই এমন সমস্যা রয়েছে। ওই ব্যাংকগুলোরও পর্ষদ ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে। তবে, এমন যেসব ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালক পালাতক রয়েছেন তারা আপনা আপনিই আগামী মাস থেকে পরিচালকের পদ হারাবেন বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ওই ব্যাংকগুলোর পর্ষদ ভাঙতে হবে না। আপনা আপনিই তা পুনর্গঠন হয়ে যাবে। কারণ হিসেবে একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, করোনার সময় ব্যাংকের পর্ষদ সভাগুলোকে ভার্চুয়ালি করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। যা দীর্ঘ দিন ধরেই বলবত ছিল। করোনার প্রাদুর্ভাব কমে যাওয়ার পর দেশ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। এ কারণে আর ভার্চুয়ালি করার কোনো সুযোগ নেই। এ কারণে পর্ষদ সভায় সশরীরে এসেই উপস্থিত থাকতে হবে। অন্যথায় তিনটি পর্ষদ সভায় অনুপস্থিত থাকার কারণেই আপনা আপনিই তাদের পরিচালক পদ বাতিল হয়ে যাবে।
সেই ক্ষেত্রে যারা নিয়ম মেনে ব্যবসা করেছিলেন, বা যেসব শেয়ারহোল্ডার কোনো বেনামি ঋণ নেননি তারা নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকের শূন্য পরিচালকদের পদে আসতে পারবেন। এতে আইনগত কোনো জটিলতা থাকবে না।
নতুন প্রজন্মের একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, তার ব্যাংকের এমন তিনজন পরিচালক আছেন, যারা ব্যাংকের পর্ষদ সভায় অনুপস্থিত রয়েছেন। তারা নামে বেনামে ঋণ নিলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা যেতো না। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও দলীয় সমর্থক ব্যবসায়ী ছিলেন। জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই তারা দেশ থেকে সপরিবারে পালিয়ে গেছেন।
আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্ষদ বৈঠক হওয়ার কথা। ওই বৈঠকে অনুপস্থিত থাকলেই এসব দুর্নীতিবাজ পরিচালকদের পদ আপনা আপনিই শূন্য হয়ে যাবে। এ অবস্থায় অনেক সৎ শেয়ারহোল্ডার রয়েছেন। তাদের বিষয়েই পর্ষদ নতুন চিন্তাভাবনা করছে বলে তিনি জানান।
অপর একটি ব্যাংকের বোর্ড সচিব জানিয়েছেন, তাদের ব্যাংকেও এমন দুইজন পরিচালক রয়েছেন যারা চলতি মাস গেলে তিনটি পর্ষদ অনুপস্থিত থাকবেন। তাদের একজন সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য ও অপরজন একজন সাবেক মন্ত্রীর আত্মীয় রয়েছেন। মূলত এ শেয়ারটি ওই মন্ত্রীরই। আর এ কারণে আগামী মাস থেকে তাদের পরিচালকের পদ শূন্য হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে তাদের স্থলে নতুন পরিচালক আসবেন।