ঢাকা || ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ওয়েবিনারে বক্তারা

ব্যাংক দখলে বারবার এস আলম মডেল ব্যবহার

ব্যাংক দখলে বারবার এস আলম মডেল ব্যবহার

ব্যাংক ইনফো

প্রকাশিত: ০০:০২, ৩১ আগস্ট ২০২৪

বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে মন্দ ঋণের পরিমাণ কত, সেটি কেউ জানে না। তবে সবাই জানে, ইসলামীসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে ঋণ বের করার কাজটি কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ফলে মন্দ ঋণের ব্যাপ্তি কত, তা বের করাটা কঠিন কাজ নয়। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে নেওয়া ঋণের ব্যাপ্তি ও পরিধি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেতে ফরেনসিক নিরীক্ষা দরকার।

ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজের আয়োজনে ‘ব্যাংকিং খাতে দখলদারিত্ব উচ্ছেদ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন। তাঁরা বলেন, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় একের পর ব্যাংক দখলে এস আলম মডেল ব্যবহার করা হয়েছে। তাই ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা আনতে হলে সামগ্রিকভাবে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।

আজ শুক্রবার সকালে অনুষ্ঠিত এ ওয়েবিনার সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক মনির হায়দার। আলোচনায় অংশ নেন সাবেক ব্যাংকার ও ফিন্যান্সিয়াল এক্সিলেন্সের চেয়ারম্যান মামুন রশীদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান ও ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুল মান্নান। সমাপনী বক্তব্য দেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।

ব্যাংক ও আর্থিক খাতে প্রতারণা ও দুর্বৃত্তায়নের মূল কারণ হিসেবে নষ্ট ও পচা রাজনীতি দায়ী বলে মন্তব্য করেন বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, জনকল্যাণের পরিবর্তে গোষ্ঠীর কল্যাণে রাজনীতি কাজ করছে। সাবেক সরকারপ্রধান তাঁদের প্রতিনিধি হিসেবে এস আলম গ্রুপকে ইসলামী ব্যাংক দখল করতে সরাসরি নির্দেশনা দেন। ফলে রাজনীতি জনকল্যাণমূলক না হলে কোনো কিছুই ঠিক হবে না।

বদিউল আলম মজুমদার আরও বলেন, রাজনীতি ঠিক করতে হবে। রাজনীতি ঠিক না করে ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সঠিক নেতৃত্ব না আনা গেলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। আর্থিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব৵ক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার ওপরও জোর দেন তিনি।

যেখানে সংস্কার দরকার
ব্যাংক দখলে বারবার এস আলম মডেল ব্যবহার করা হয়েছে উল্লেখ করে মামুন রশীদ বলেন, সকালে ঋণের আবেদন করে বিকেলে পাস হয়ে সন্ধ্যায় হুন্ডি হয়ে টাকা বাইরে চলে গেছে। সন্ধ্যা ছয়টার পরও ব্যাংক থেকে টাকা তোলা হয়েছে। এসব অভিযোগের কোনো বিচার হয়নি; বরং বাংলাদেশ ব্যাংক সহায়তা করেছে। একজন ডেপুটি গভর্নর হুন্ডির মাধ্যমে এস আলম গ্রুপের টাকা বিদেশে পাচারে সহায়তা করেন। এভাবেই এস আলম মডেল ফুলেফেঁপে বড় হয়েছে।

মামুন রশীদ বলেন, সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারকে পছন্দ করতেন সদ্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী। এ জন্য গভর্নর কোনো নিয়মনীতি মানতেন না। তাঁর (বিদায়ী গভর্নর) আনুকূল্য না থাকলে অর্থ মন্ত্রণালয়ে কারও পদায়ন হতো না।

ব্যাংকের মালিক পরিচালনা পর্ষদ নয়, সাধারণ আমানতকারীরাই ব্যাংকের মালিক—এটি সবার মধ্যে পরিষ্কার করার ওপর জোর দেন অর্থনীতিবিদ রাশেদ আল তিতুমীর। তিনি বলেন, আমানতকারীদের অর্থে ব্যাংক পরিচালিত হয়। তাই গ্রাহকের আমানতের খেয়ানত রুখতে আস্থাহীনতা দূর করা, আমানতের প্রতিরক্ষণ, পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধার, সংস্কার ও পুনর্গঠন জরুরি।

অর্থনীতিবিদ রাশেদ আল তিতুমীর আরও বলেন, ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা আনতে প্রায়োগিক সমাধানে জোর দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকে ইসলামি উইং চালু করা প্রয়োজন। সেটি হতে হবে আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুযায়ী। ব্যাংক খাতের সংস্কার বাংলাদেশ মডেলেই হতে হবে।