উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং ব্যাংক আমানতের সুদহার ধারাবাহিক ভাবে বৃদ্ধির পাওয়ায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ আগের বছরের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৮৪ শতাংশের বেশি কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে ২০২২-২৩ অর্থবছরের সঞ্চয়পত্রের নেতিবাচক বিক্রি ছিল ৩ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ সাল শেষে নেতিবাচক বিক্রির পরিমান দাড়িয়েছে ২১ হাজার ১২৪ কোটি টাকায়।
শুধুমাত্র জুন মাসে, নিট নেতিবাচক বিক্রি ৩ হাজার ৩৮১ কোটি টাকায় নেমে এসেছে, যা আগের বছরের জুনে ছিল ২৬৭ কোটি টাকা।
এই নেতিবাচক প্রবনতার ফলে সঞ্চয়পত্র বিক্রির চেয়ে মুল পরিশোধকে ছাড়িয়ে গেছে, ফলে সরকারের কোষাগার অথবা ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋনের মাধ্যমে এই অর্থ গ্রাহককে পরিশোধ করতে হয়েছে।
ব্যাংকাররা বলেছেন, সঞ্চয়পত্র নগদায়ন করার এই প্রবণতায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে মানুষ দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ মুল্যস্ফীতির চাপে তারা সঞ্চয়ের উপর নির্ভর করছে।
ক্রমবর্ধমান দৈনন্দিন চাহিদা মেটানোর জন্য অনেককে সঞ্চয় এবং বিনিয়োগকৃত অতিরিক্ত তহবিল ব্যয় করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ১৩ বছর ৭ মাসের মধ্যে গত জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে উঠেছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি তো আরও বেশি, ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। ২০১০-১১ সালের জুলাই মাসে মুল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৯ শতাংশ।
ব্যাংকাররা বলেছেন, আমানতের সুদের হার বৃদ্ধি এবং ট্রেজারি বন্ডের হারকে আরও আকর্ষণীয় করেছে বাংলাদেশ ফলে বিনিয়োগকারীদের জন্য জাতীয় সঞ্চয় পত্রের চাহিদা কমেছে। ট্রেজারি বিলের সুদের হার রেকর্ড বেড়ে ১২ শতাংশ ছাড়িয়েছে, যার ফলে মানুষ এখন উচ্চ-সুদের হারের কারণে সরকারী ট্রেজারি বিল এবং বন্ডগুলোতে বিনিয়োগ করতে পছন্দ করছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ হয়েছে ৩ লাখ ৪৬ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা, যা আগের বছরে ছিল ৩ লাখ ৬০ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা।চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ১৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে, সরকার এই উচ্চ-সুদের উপকরণগুলির মাধ্যমে আরও ঋণ নেওয়ার চেয়ে ঋণ পরিশোধকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকার ৮৪ হাজার ৫৪ কোটি টাকা পরিশোধ করলেও ঋণ নিয়েছিল ৮০ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা।
একইভাবে ২০২১-২২ অর্থ বছরে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে প্রায় ১৯ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে, যা ৩২ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উল্লেখযোগ্য ভাবে কম।
ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমান কমেছে ২০২০-২১ অর্থবছর থেকেই। মহামারী করোনার মধ্যে সরকার ৪২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল। ২০২১ সালে সঞ্চয়পত্রের সুহার ১ থেকে ২ শতাংশ কমানোর কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।
সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের সীমা নির্ধারণ এবং জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করায় ক্রয়ে আরও বেশি আগ্রহ হারিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
বর্তমানে ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আগের বছরের আয়কর রিটার্নের প্রমাণ জমা দিতে বাধ্য করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।